স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে খানাগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যার প্রভাব পড়বে গোটা অর্থনীতিতে। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি। গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাসে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। তারও আগে জুনে এক পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ধরেছিল সংস্থাটি। তবে বাংলাদেশ সরকারের এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাসে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভুগছে সরকার। জ্বালানি সংকটে অত্যধিক লোডশেডিংয়ের ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিকে বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়াআমদানি ব্যয় সংকোচন, মুদ্রানীতির কঠোরতারও প্রভাব পড়েছে পণ্য উৎপাদনে।
প্রতিবেদনে চলতি বছরের পূর্বাভাসে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়তির দিকেই থাকবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত জুন থেকে বাংলাদেশি টাকার মান ১৮ শতাংশ কমেছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৮০০ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এভাবে ক্রমাগত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশকে আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য ঠেলে দিচ্ছে। যে ঋণের অর্থ দিয়ে আপাতত টিকে থাকার কাজটি চালানো হবে।
এদিকে মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এক বিবৃতিতে আবারও ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছেন। তার মতে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ; যা ২০০৯ ও ২০২০ সালের মন্দার বাইরে ১৯৯৩ সালের পর সবচেয়ে কম। যদিও সংস্থাটি ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গড় প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের নিচে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে প্রত্যাশিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হারের হঠাৎ বৃদ্ধি, কোভিড মহামারী থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কিংবা বাড়তে থাকা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতিকে খারাপভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে। কারণ তারা ঋণের বোঝা, দুর্বল মুদ্রামান ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে।